চিত্রনায়িকা কেয়াকে গ্রেফতারে কৌশলী ফাঁদ পেতেছিল পুলিশ। গোপন খবর ছিল, গুলশানের নিকেতন এলাকার একটি বাসায় অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। সেখানে কেয়াসহ আরও অনেক তরুণীর নিয়মিত যাতায়াত আছে। এই তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর খদ্দের সেজে সেখানে যান দুই পুলিশ সদস্য। তারা কেয়ার সঙ্গে সময় কাটাতে চাইলে নির্ধারিত টাকার চুক্তিতে সে ব্যবস্থা করে দেন বাড়িওয়ালি সাবিনা ইয়াসমীন পপি। এরপর ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার নাম করে একজন বাইরে এসে অভিযানকারী দলের অন্য সদস্যদের খবর দেন। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতারকৃত তরুণীই (সাবরিনা ইতি) চিত্রনায়িকা কেয়া বলে নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার পুলিশ অভিযানের এ বর্ণনা দেয়।
এ ব্যাপারে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি মাসুদ পারভেজ বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এরা নিজেদের কুকর্মে চলচ্চিত্রের পরিচয়কে ব্যবহার করছে। শিল্পী নির্বাচনে কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় এমনটা ঘটছে। শিল্পীদের নূ্যনতম যোগ্যতা নির্ধারণ ও বিষয়টি নজরদারিতে রাখার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল বারেক বলেন, গ্রেফতারকৃত সাজ্জাদ হোসেন ও পপি দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে। তবে কোনো বাসায়ই তারা ২-৩ মাসের বেশি থাকেন না। নিকেতনের এক নম্বর সড়কের ১৩/১৫ নম্বর বাসার সি-৫ ফ্ল্যাটটিও তারা চলতি মাসের শুরুতে ভাড়া নেন। সোহেল নামে পপির এক আত্মীয় কিছুদিন চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তার মাধ্যমে বিপথগামী মডেল বা অভিনেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পপি। খদ্দেরের চাহিদা অনুযায়ী তাদের বাসায় ডেকে নেন। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল ওই বাড়ির কাছে গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপর এসআই মোস্তাফিজুর রহমান ও সোহেল রানা বাসায় ঢুকে পপির সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মোস্তাফিজ নিজেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন। তিনি কেয়ার উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বলেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে তিনি সময় কাটাতে চান। পপি জানান, কেয়াকে পাওয়া যাবে। তবে এ জন্য ৯০ হাজার টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে তিনি ৪০ হাজার ও কেয়া ৫০ হাজার নেবেন। মোস্তাফিজ রাজি হয়ে যান। এরপর তিনি কেয়াকে দেখতে চাইলে তাকে নিয়ে আসা হয়। কেয়া মোস্তাফিজকে বলেন, 'কি বিশ্বাস হচ্ছে না আমি নায়িকা কেয়া? ভালো করে দেখুন, পর্দার কেয়ার সঙ্গে মিলছে কি-না।' এরপর তিনি অগ্রিম টাকা দাবি করে বসেন। এ সময় এসআই সোহেল রানাকে নিজের বডিগার্ড পরিচয় দিয়ে মোস্তাফিজ তার হাতে ডেবিট কার্ড ধরিয়ে দেন এবং কাছাকাছি কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে বলেন। সোহেল নিচে এসে এসআই আবদুল বারেককে সঙ্গে নিয়ে ওই বাসায় ঢোকেন। এ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের পরিচয় জানিয়ে বাসায় উপস্থিত দুই পুরুষ ও আট তরুণীকে আটক করেন।
গ্রেফতারের পর কেয়া বলেন, স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। ছয় বোন ও মাকে নিয়ে তার অভাবের সংসার। তাই মাঝে মধ্যে তিনি 'এ লাইনে' কাজ করেন। গতকাল গ্রেফতারকৃত ১০ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে আটজন ২০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়া পান। পপি-সাজ্জাদ দম্পতিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। পুলিশ দাবি করে, কেয়ার পারিবারিক ইতিহাস ভালো নয়। তার ছয় বোনই অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত।
ওদিকে কেয়ার মা সুফিয়া বেগম বলেছেন, সাজানো অভিযানে তার মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গুলশান থানার দুই এসআই কেয়াকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পুলিশের হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয়। কিন্তু এতে পুলিশ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। ওই দুই এসআই উপরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এরপর টাকার অংক বাড়িয়ে ১০ লাখ করা হয়। কিন্তু এতটাকা দিতে রাজি হননি কেয়ার মা। নানা নাটকের পর কেয়াসহ ৮ জন কলগার্লকে গুলশান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তখনও কেয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর পরিকল্পনা পুলিশের ছিল না। কেয়ার মায়ের সঙ্গে পুলিশের টাকার অংক নিয়ে দরকষাকষি চলছিল। এর মধ্যেই সাংবাদিকরা খবর পেয়ে থানায় হাজির হন। ফলে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কেয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় রাত ১১টায়। অথচ তাকে পুলিশ আটক করে দুপুর ১২টায়। রাত ৯টা পর্যন্ত কেয়া নামের কাউকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশ স্বীকারই করেনি। পরে পুলিশের একটি সূত্র কেয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একই সঙ্গে কেয়ার মা থানা থেকেই ফোন করে কেয়াকে ছেড়ে দেয়ার জন্য সাংবাদিকদের সহায়তা চান। ফলে কেয়াকে লুকানোর আর কোন পথ খোলা ছিল না পুলিশের। সাংবাদিকদের মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় থানায়। একপর্যায়ে কেয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করে পুলিশ। গুলশান থানার অপারেশন অফিসার জাবেদ মাসুদ আনুষ্ঠানিকভাবে বলেন হ্যাঁ যে ক’জন কলগার্লকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার মধ্যে চিত্রনায়িকা কেয়াও আছেন। জাবেদ বলেন, অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে কেয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার কাছ থেকে কোন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়নি। কেয়ার সঙ্গে কোন খদ্দেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। সবকিছু এখনই বলা ঠিক হবে না। চিত্রনায়িকা কেয়ার উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান থানার পরিবেশ ছিল অন্যরক। রাতভর নানান লোক থানায় গেছেন। কেয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার ৭ জন হাই সোসাইটির কলগার্লকে গুলশান থানার হাজত খানায় রাখা হলেও নায়িকা কেয়াকে রাখা হয়েছিল থানার সেরেস্তা কক্ষে। ওই কক্ষে রাত ১২টা পর্যন্ত পুলিশ ছাড়া কেউই প্রবেশ করতে পারেনি। তবে রাত দেড়টার দিকে এ চিত্র বদলে যায়। গভীর রাতে থানায় দায়িত্ব পালন করা ৪/৫ জন পুলিশ সদস্য দফায় দফায় ওই কক্ষে ঢুকেছেন এবং অল্প সময় পরই বেরিয়ে গেছেন। রাত দেড়টার দিকে গুলশান থানার ওসি তদন্ত শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম থানায় যান। নিজের কক্ষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই তিনি কেয়াকে যে কক্ষে রাখা হয়েছে সে কক্ষে ঢোকেন। প্রায় আধাঘণ্টা পর তিনি ওই কক্ষ থেকে বের হন। রাত ৪টা ১২ মিনিটে থানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একাধিকবার হাফপ্যান্ট পরে ওই কক্ষে ঢুকতে ও বের হতে দেখা গেছে তাকে। অবশ্য মাসুদ দাবি করেছেন তিনি একবারের জন্যও কেয়াকে দেখতে যাননি। এছাড়া রাত আড়াইটায় বেশকিছু বিয়ার উদ্ধার করে থানায় জমা দেয় র্যাব সদস্যরা। জব্দকৃত বিয়ারের কেস খুলে বিয়ার পান করে বেশ উত্তেজিত হয়ে ওঠেন মাসুদ। দায়িত্বপালনরত পুলিশ সদস্যদের গালাগালিও করেন তিনি। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতিও কটূক্তি করেন। কিছুটা বেসামাল হয়ে তিনি বিয়ারের বোতল হাতে থানা চত্ব্বরে ঘুরে বেড়ান। ওই অবস্থাতেই তিনি চিত্রনায়িকা কেয়ার কক্ষে ঢোকেন। তখন থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা কেয়ার মা সুফিয়া বেগম ডুকরে কেঁদে ওঠেন। কেয়ার মা সুফিয়া বেগম রাত ১২টা পর্যন্ত থানার সেরেস্তা কক্ষে কেয়ার সঙ্গেই ছিলেন। তার মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ তাকে বের হতে দিচ্ছে না। পরে থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে কেয়ার মাকে বাইরে বের করতে বাধ্য হয় পুলিশ। থানাতেই কেয়ার মা বলেন, আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। ১১টার দিকে আমার মোবাইলে একটি ফোন আসে। একজন বলে লন্ডন থেকে দু’জন প্রডিউসার এসেছেন। তারা নতুন ছবি বানাবেন। ছবিতে কেয়াকে নায়িকা হিসেবে নিতে চান তারা। চুক্তি করার জন্য নিকেতনের ওই বাড়িতে যেতে বলেন। আমরা বাড়িতে গিয়ে কোন প্রডিউসারকে পাইনি। কিন্তু দু’জন পুলিশকে দেখতে পাই। তারা আমাদের নানা ভয়-ভীতি দেখায়। এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পরে রাত ২টার দিকে কেয়ার জন্য জামাকাপড় নিয়ে আসেন তিনি। থানার বাইরে একটি সাদা প্রাইভেট কারে (ঢাকা মেট্রো ৩৩-০১৯৯) বসে থাকার সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, কেয়ার জীবনে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। তারপরও একটু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু এখন সব শেষ হয়ে গেল। আমার আরও দু’টো মেয়ে এখন কিভাবে স্কুলে যাবে আমরা কিভাবে মুখ দেখাবো। অথচ সবকিছুই সাজানো। কিন্তু মানুষকে কিভাবে বোঝাবো।
ওদিকে গতকাল কেয়াকে আদালতে হাজির করা হলে ৫০০ টাকা জরিমানা দিয়ে বেলা সাড়ে ৩টায় ছাড়া পান তিনি। ছাড়া পেয়েই তিনি মায়ের সঙ্গে সোজা চলে যান তার গুলশানস্থ বাসায়। ছাড়া পাওয়ার পর কেয়া বলেন, গতকাল রাত থেকে একটু আগে পর্যন্ত খুব ধকলের মধ্যে ছিলাম। সারা রাত ঘুমাইনি। খুব ক্লান্ত আমি। বিশ্রাম নিয়ে পরে কথা বলবো। তবে এটুকু বলি, আমি আসলে ষড়যন্ত্রের শিকার।
এ ব্যাপারে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি মাসুদ পারভেজ বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এরা নিজেদের কুকর্মে চলচ্চিত্রের পরিচয়কে ব্যবহার করছে। শিল্পী নির্বাচনে কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় এমনটা ঘটছে। শিল্পীদের নূ্যনতম যোগ্যতা নির্ধারণ ও বিষয়টি নজরদারিতে রাখার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল বারেক বলেন, গ্রেফতারকৃত সাজ্জাদ হোসেন ও পপি দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে। তবে কোনো বাসায়ই তারা ২-৩ মাসের বেশি থাকেন না। নিকেতনের এক নম্বর সড়কের ১৩/১৫ নম্বর বাসার সি-৫ ফ্ল্যাটটিও তারা চলতি মাসের শুরুতে ভাড়া নেন। সোহেল নামে পপির এক আত্মীয় কিছুদিন চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তার মাধ্যমে বিপথগামী মডেল বা অভিনেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পপি। খদ্দেরের চাহিদা অনুযায়ী তাদের বাসায় ডেকে নেন। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল ওই বাড়ির কাছে গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপর এসআই মোস্তাফিজুর রহমান ও সোহেল রানা বাসায় ঢুকে পপির সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মোস্তাফিজ নিজেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন। তিনি কেয়ার উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বলেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে তিনি সময় কাটাতে চান। পপি জানান, কেয়াকে পাওয়া যাবে। তবে এ জন্য ৯০ হাজার টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে তিনি ৪০ হাজার ও কেয়া ৫০ হাজার নেবেন। মোস্তাফিজ রাজি হয়ে যান। এরপর তিনি কেয়াকে দেখতে চাইলে তাকে নিয়ে আসা হয়। কেয়া মোস্তাফিজকে বলেন, 'কি বিশ্বাস হচ্ছে না আমি নায়িকা কেয়া? ভালো করে দেখুন, পর্দার কেয়ার সঙ্গে মিলছে কি-না।' এরপর তিনি অগ্রিম টাকা দাবি করে বসেন। এ সময় এসআই সোহেল রানাকে নিজের বডিগার্ড পরিচয় দিয়ে মোস্তাফিজ তার হাতে ডেবিট কার্ড ধরিয়ে দেন এবং কাছাকাছি কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে বলেন। সোহেল নিচে এসে এসআই আবদুল বারেককে সঙ্গে নিয়ে ওই বাসায় ঢোকেন। এ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের পরিচয় জানিয়ে বাসায় উপস্থিত দুই পুরুষ ও আট তরুণীকে আটক করেন।
গ্রেফতারের পর কেয়া বলেন, স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। ছয় বোন ও মাকে নিয়ে তার অভাবের সংসার। তাই মাঝে মধ্যে তিনি 'এ লাইনে' কাজ করেন। গতকাল গ্রেফতারকৃত ১০ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে আটজন ২০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়া পান। পপি-সাজ্জাদ দম্পতিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। পুলিশ দাবি করে, কেয়ার পারিবারিক ইতিহাস ভালো নয়। তার ছয় বোনই অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত।
ওদিকে কেয়ার মা সুফিয়া বেগম বলেছেন, সাজানো অভিযানে তার মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গুলশান থানার দুই এসআই কেয়াকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পুলিশের হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয়। কিন্তু এতে পুলিশ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। ওই দুই এসআই উপরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এরপর টাকার অংক বাড়িয়ে ১০ লাখ করা হয়। কিন্তু এতটাকা দিতে রাজি হননি কেয়ার মা। নানা নাটকের পর কেয়াসহ ৮ জন কলগার্লকে গুলশান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তখনও কেয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর পরিকল্পনা পুলিশের ছিল না। কেয়ার মায়ের সঙ্গে পুলিশের টাকার অংক নিয়ে দরকষাকষি চলছিল। এর মধ্যেই সাংবাদিকরা খবর পেয়ে থানায় হাজির হন। ফলে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কেয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় রাত ১১টায়। অথচ তাকে পুলিশ আটক করে দুপুর ১২টায়। রাত ৯টা পর্যন্ত কেয়া নামের কাউকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশ স্বীকারই করেনি। পরে পুলিশের একটি সূত্র কেয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একই সঙ্গে কেয়ার মা থানা থেকেই ফোন করে কেয়াকে ছেড়ে দেয়ার জন্য সাংবাদিকদের সহায়তা চান। ফলে কেয়াকে লুকানোর আর কোন পথ খোলা ছিল না পুলিশের। সাংবাদিকদের মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় থানায়। একপর্যায়ে কেয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করে পুলিশ। গুলশান থানার অপারেশন অফিসার জাবেদ মাসুদ আনুষ্ঠানিকভাবে বলেন হ্যাঁ যে ক’জন কলগার্লকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার মধ্যে চিত্রনায়িকা কেয়াও আছেন। জাবেদ বলেন, অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে কেয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার কাছ থেকে কোন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়নি। কেয়ার সঙ্গে কোন খদ্দেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। সবকিছু এখনই বলা ঠিক হবে না। চিত্রনায়িকা কেয়ার উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান থানার পরিবেশ ছিল অন্যরক। রাতভর নানান লোক থানায় গেছেন। কেয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার ৭ জন হাই সোসাইটির কলগার্লকে গুলশান থানার হাজত খানায় রাখা হলেও নায়িকা কেয়াকে রাখা হয়েছিল থানার সেরেস্তা কক্ষে। ওই কক্ষে রাত ১২টা পর্যন্ত পুলিশ ছাড়া কেউই প্রবেশ করতে পারেনি। তবে রাত দেড়টার দিকে এ চিত্র বদলে যায়। গভীর রাতে থানায় দায়িত্ব পালন করা ৪/৫ জন পুলিশ সদস্য দফায় দফায় ওই কক্ষে ঢুকেছেন এবং অল্প সময় পরই বেরিয়ে গেছেন। রাত দেড়টার দিকে গুলশান থানার ওসি তদন্ত শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম থানায় যান। নিজের কক্ষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই তিনি কেয়াকে যে কক্ষে রাখা হয়েছে সে কক্ষে ঢোকেন। প্রায় আধাঘণ্টা পর তিনি ওই কক্ষ থেকে বের হন। রাত ৪টা ১২ মিনিটে থানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একাধিকবার হাফপ্যান্ট পরে ওই কক্ষে ঢুকতে ও বের হতে দেখা গেছে তাকে। অবশ্য মাসুদ দাবি করেছেন তিনি একবারের জন্যও কেয়াকে দেখতে যাননি। এছাড়া রাত আড়াইটায় বেশকিছু বিয়ার উদ্ধার করে থানায় জমা দেয় র্যাব সদস্যরা। জব্দকৃত বিয়ারের কেস খুলে বিয়ার পান করে বেশ উত্তেজিত হয়ে ওঠেন মাসুদ। দায়িত্বপালনরত পুলিশ সদস্যদের গালাগালিও করেন তিনি। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতিও কটূক্তি করেন। কিছুটা বেসামাল হয়ে তিনি বিয়ারের বোতল হাতে থানা চত্ব্বরে ঘুরে বেড়ান। ওই অবস্থাতেই তিনি চিত্রনায়িকা কেয়ার কক্ষে ঢোকেন। তখন থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা কেয়ার মা সুফিয়া বেগম ডুকরে কেঁদে ওঠেন। কেয়ার মা সুফিয়া বেগম রাত ১২টা পর্যন্ত থানার সেরেস্তা কক্ষে কেয়ার সঙ্গেই ছিলেন। তার মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ তাকে বের হতে দিচ্ছে না। পরে থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে কেয়ার মাকে বাইরে বের করতে বাধ্য হয় পুলিশ। থানাতেই কেয়ার মা বলেন, আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। ১১টার দিকে আমার মোবাইলে একটি ফোন আসে। একজন বলে লন্ডন থেকে দু’জন প্রডিউসার এসেছেন। তারা নতুন ছবি বানাবেন। ছবিতে কেয়াকে নায়িকা হিসেবে নিতে চান তারা। চুক্তি করার জন্য নিকেতনের ওই বাড়িতে যেতে বলেন। আমরা বাড়িতে গিয়ে কোন প্রডিউসারকে পাইনি। কিন্তু দু’জন পুলিশকে দেখতে পাই। তারা আমাদের নানা ভয়-ভীতি দেখায়। এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পরে রাত ২টার দিকে কেয়ার জন্য জামাকাপড় নিয়ে আসেন তিনি। থানার বাইরে একটি সাদা প্রাইভেট কারে (ঢাকা মেট্রো ৩৩-০১৯৯) বসে থাকার সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, কেয়ার জীবনে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। তারপরও একটু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু এখন সব শেষ হয়ে গেল। আমার আরও দু’টো মেয়ে এখন কিভাবে স্কুলে যাবে আমরা কিভাবে মুখ দেখাবো। অথচ সবকিছুই সাজানো। কিন্তু মানুষকে কিভাবে বোঝাবো।
ওদিকে গতকাল কেয়াকে আদালতে হাজির করা হলে ৫০০ টাকা জরিমানা দিয়ে বেলা সাড়ে ৩টায় ছাড়া পান তিনি। ছাড়া পেয়েই তিনি মায়ের সঙ্গে সোজা চলে যান তার গুলশানস্থ বাসায়। ছাড়া পাওয়ার পর কেয়া বলেন, গতকাল রাত থেকে একটু আগে পর্যন্ত খুব ধকলের মধ্যে ছিলাম। সারা রাত ঘুমাইনি। খুব ক্লান্ত আমি। বিশ্রাম নিয়ে পরে কথা বলবো। তবে এটুকু বলি, আমি আসলে ষড়যন্ত্রের শিকার।
No comments:
Post a Comment