দেখার বাসনা লোপ পাচ্ছে। বারবার মনে পড়ছে জীবনানন্দ দাশকে। তিনিও কী দেখার বাসনা লোপ পাওয়া রোগে ভুগছিলেন? কলকাতার রাস্তায় দানবের মতো এক ট্রামের নিচে পিষ্ঠ হলেন তিনি। যদি দেখতেন তাহলে কি এমনটা ঘটার কথা ছিল? জীবনানন্দ লিখলেন, যারা অন্ধ তারা চোখে দেখে বেশি। কেননা অদ্ভুত অাঁধার এসেছে। অন্ধরাই যদি চোখে দেখে বেশি, তাহলে যারা অন্ধ নয় তাদের দেখার খায়েশ না থাকায় বোধ করি যুক্তিযুক্ত ও শ্রেয়।
একথা সর্বজনবিদিত যে, মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। কেননা, সে একা বসবাস করতে পারে না। সমাজে বসবাস করতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলতে হয়। এরজন্য কারও সুবিধা যেমন হয় তেমন অসুবিধাও বোধ করি অনেকেরই হয়। সুবিধা-অসুবিধার মাঝামাঝিতেও থাকে কেউ কেউ। কিন্তু যাই-ই হোক মেনে চলতে হয়, মানিয়ে নিতে হয়। এর মধ্যেই থাকে সর্বজনের কল্যাণ ও মঙ্গল। কিন্তু আমাদের তারকারা একাবরও কী ভেবে দেখছেন তারা যা করেছেন তাতে সমাজের আর দশজন মানুষ কী ভাবছে? কিংবা তাদের কৃতকর্ম সমাজকে কতটা প্রভাবিত করছে? মাঝেমাঝেই তারকারা এমন কিছু করেন, যা কোন সভ্য সমাজের, সভ্য মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও দুরূহ।
স্কুল জীবনে পড়েছি। অনেকেই নিশ্চয় পড়েছেন। এখনো বোধ করি পড়ানো হয়। বিষয়টা ছিল একজন শিল্পীর দায়বদ্ধতা। এখানে শিল্পী বলতে শুধু কণ্ঠশিল্পীকেই বোঝানো হয়নি। সৃজনশীলতায় সম্পৃক্ত সবাইকেই বোঝানো হয়েছে। এসব সৃজনশীল প্রতিভাধরদের মধ্যে অনেকখানি এগিয়ে রয়েছে অভিনয় শিল্পীরা। কেননা, অভিনয় শিল্পী বলে কথা! তাদের মতো করে ছলাকলা জানেই বা ক'জন আর প্রদর্শনে পারঙ্গমই বা কারা? বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা। উঠতি নায়িকা ঘর বাঁধলেন এক শিল্পীর সঙ্গে। বলা প্রয়োজন শুধু বাঁধলেন না। একটি ঘর ভাঙলেন, ভাঙালেন। তারই মতো এক নারীর দুই সন্তানসহ কপাল পুড়ল। নায়িকা মনে করেছিল, হেভি একটা দান মেরেছে জীবনের দাবা খেলায়। নিদারুণ বাস্তবতা তখন ভবিষ্যতের চাঁদর গায়ে দিয়ে নিশ্চয় মিটিমিটি হেসেছে। যার ফল পেল হাতেনাতে, মাত্র ক'দিন পরে। যা হওয়ার তাই হয়েছে। দু'দিন পর ওই নায়িকার ঘর শূন্য হয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে নায়িকা বললেন, হৃদয় ভাঙা মর্মন্তুদ অভিজ্ঞতার কথা। সবাই আছে, সব আছে, শুধু তিনি নেই। একদিন যার জন্য আমি সব ছেড়েছিলাম, আজ তিনিই নেই।
আর একটা ঘটনার এখন প্রত্যুষ মুহূর্ত কাটেনি। দু'জন নায়ক-নায়িকা ঘর বেঁধেছেন। অথচ সামান্য ক'দিন আগে ওই নায়িকার বাগদান সম্পন্ন হয়েছে। হাসির ফোয়ারা ছড়িয়ে তখন তিনি বলেছিলেন, ওর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। আশা করি, আমাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হবে।
পালিয়ে বিয়ে করে একা অভিনেত্রী ও পরিচালক অনেক স্বপ্নের কথা শুনিয়েছিলেন। তারপর সামান্য ক'দিন। আহা প্রেম! আহা স্বপ্ন! আজও সংসার ভাগ্য হয়নি ওই নায়িকার। এক অবিকল আরেকটি উদাহরণ। ইতোমধ্যে তারা অবশ্য পৃথক পৃথক সংসার সাজিয়েছে। ওই নায়িকার প্রথম সংসার ভাঙার পর যাকে নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল, তার সঙ্গেই ঘর বাঁধলেন। তার মানে কি সংসার থাকা অবস্থাতে তার সম্পর্কে উত্থাপিত অভিযোগ, গুঞ্জন সব সত্যি? এই কী আমাদের শিল্পীদের সামাজিক দায়বদ্ধতার নমুনা। ঘর ভাঙা সঙ্গত। কিন্তু এই ভাবে? আমাদের শিল্পীরা কি সত্য বলে? বললে তার নজির কি এই সব? রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতায় আছে, বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা যায়, বুদ্ধিজীবীদের নয়। রুদ্র দা, কবিতাটা একটু পাল্টে দিলে আপনি কি খুব মাইন্ড করবেন?
-কাজল রশীদ শাহীন
No comments:
Post a Comment