নিউ ইয়র্ক থেকে এনা: ৫ বছর বয়সী আরিয়ার পিতা কে - এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে নিউ ইয়র্কের মর্টগেজ ব্রোকার তাওহিদ সিদ্দিকী ওরফে রুশো স্টেট ডিপার্টমেন্টের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অাঁখি আলমগীরের গর্ভে জন্ম হওয়া আরিয়া'র পিতৃত্ব নির্ধারণে যত ডলার প্রয়োজন তা ব্যয়েও আপত্তি নেই তার। কন্যার পিতৃত্ব নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান না ঘটলে ভবিষ্যতে রুশোর কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই তিনি ঢাকা-নিউ ইয়র্ক-ওয়াশিংটন ডিসিতে চিঠি চালাচালি এবং এটর্নির পরামর্শ নিচ্ছেন। অাঁখি আলমগীরের সঙ্গে রুশোর চুটিয়ে প্রেম এবং অবশেষে কলকাতায় গিয়ে বিয়ে, বিয়ের আগে ও পরে বিভিন্ন দেশে আনন্দ ভ্রমণ এবং উচ্ছল আনন্দের জীবন যাপনের বেশ কিছু ছবি সংবলিত অনুসন্ধানী একটি প্রতিবেদন বুধবার (২১শে অক্টোবর) প্রকাশিত 'ঠিকানা'য় 'শিল্পী অাঁখি আলমগীরের গর্ভের সন্তান আমার' - দাবি প্রবাসী রুশোর' শিরোনামে ছাপা হয়েছে। সংবাদটি প্রবাসে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের বিখ্যাত একটি সাংস্কৃতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে আঁখি আলমগীরের প্রতি সবারই বিশেষ মমত্ববোধ রয়েছে। এ সংবাদে সবাই আশাহত হয়েছেন। 'ঠিকানা'য় প্রকাশিত সংবাদের অংশবিশেষ এখানে উপস্থাপন করা হলো।
রুশো ঠিকানা অফিসে এসে ১৯শে অক্টোবর অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের কণ্ঠশিল্পী মাশহুরা আলমগীর অাঁখি ওরফে অাঁখি আলমগীরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গাঢ় হয় ২০০৪ সাল থেকে নিউ ইয়র্ক সিটিতে। বিভিন্ন শো করার জন্য যখনই অাঁখি আলমগীর নিউ ইয়র্কে এসেছে তখনই আমার সঙ্গে রাত কাটিয়েছে এবং এক পর্যায়ে সে আমার স্ত্রী হিসেবে দিনের পর দিন অতিবাহিত করেছে আমার বাসায়। সে তার স্বামীকে তালাক দিয়েছে বলে জানানোর পর আমি তাকে সেভাবে আশ্রয় দিতে কুণ্ঠাবোধ করিনি। রুশো বলেন, অাঁখি আমার সঙ্গে তার সম্পর্ককে অস্বীকার করছে, অথচ ২০০৪ সাল থেকে এ বছরের মে মাস পর্যন্ত যতবার আমেরিকায় কনসার্ট করতে এসেছে, প্রতিবারই পি-৩ ভিসার আবেদনে আমার নাম ব্যবহার করেছে এবং আই-৯৪ ফরমে আমার নাম-ঠিকানা দেয়া হয়। শুধু তাই নয় - আমেরিকায় কনসার্টের জন্য আয়কৃত অর্থের ট্যাক্স রিটার্নও আমাকেই করতে হয়েছে। এগুলো ফেডারেল ডকু্যমেন্ট - তা অস্বীকারের উপায় কারও নেই। রুশো বলেন, অাঁখি আর আমি একত্রে ঢাকার শাহীন স্কুল ও কলেজে পড়তাম। দু'জনের বন্ধুত্ব ছিল অত্যন্ত গভীর। আমরা একত্রে মিউজিক করতাম। সে গান করতো, আমি তবলা বাজাতাম। সেসব স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে ফিরতো। কিন্তু অাঁখির সেলিব্রেটি হওয়া এবং অন্য ছেলেকে বিয়ের পর আমি সে সব ভুলে নতুন জীবন শুরু করেছিলাম। নিউ ইয়র্কে ব্যবসা-চাকরি ইত্যাদি নিয়ে ভালই চলছিল। এমনি অবস্থায় ঝড়ের মতো উড়ে এসে আমার সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে আঁখি নামক কণ্ঠশিল্পী। রুশো বলেন, ২০০৪ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত আমি অাঁখির একাউন্টে ৭৪ হাজার ডলারের বেশি পাঠিয়েছি। এছাড়া নগদ কত অর্থ ব্যয় হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ইটালি, কানাডা, লন্ডন, দুবাই, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর গিয়েছি দু'জনে চিত্তবিনোদনের জন্য। সবশেষে ২০০৬ সালের ২৯শে ডিসেম্বর আমরা কলকাতার একটি হোটেলে অবস্থানকালে কাজী (নিকটস্থ মসজিদের ইমাম এবং দু'জন সাক্ষী) ডেকে এনে মুসলিম রীতিতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে অাঁখি। কেননা এর আগেই জন্ম হওয়া আরিয়ার বাবা হিসেবে আমাকে গ্রহণ করে সে। কলকাতা থেকে ফিরে আমরা ঢাকায় কোরবানি ঈদ করি। রুশো বলেন, ১৯৯৭ সালে আমেরিকায় বসতি শুরুর পর সেটি ছিল আমার প্রথম ঢাকায় যাওয়া। এরপর আমি আমার ঔরসজাত সন্তান আরিয়ার জন্য সব কিছু করি। ঢাকায় উত্তরার বাসায় অবস্থান করেছি বহুদিন অাঁখির সঙ্গে। ওর মা-বাবাও আমাকে গ্রহণ করেন। এসব বিষয় কারও অজানা নেই। আমি ও অাঁখি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে উত্তরায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে একটি একাউন্ট খুলেছি ২০০৭ সালের ১১ই ডিসেম্বর। সে একাউন্টে অাঁখির বাসার ঠিকানা (হাউজ-৮১, ফ্ল্যাট-৫সি, সেক্টর-৪, রোড-৭, উত্তরা) ব্যবহার করা হয়েছে। সে একাউন্টে নিউ ইয়র্ক থেকে টাকা পাঠিয়েছি দীর্ঘ সময়। অাঁখির খালাসহ আমার সব আত্মীয়-স্বজন জানেন যে আমরা বিয়ে করেছি। অাঁখি সেভাবে সবার সঙ্গে আচরণ করেছে। এমনকি আমার ঢাকাস্থ আত্মীয়-স্বজনকেও সে তার বাসায় দাওয়াত করেছিল। রুশো বলেন, আঁখির উত্তরাস্থ বাসার যাবতীয় ফার্নিচার এবং তার গাড়ি ক্রয়ের টাকাও আমি দিয়েছি। এগুলোর সঙ্গে ওই ৭৪ হাজার ডলারের কোন সম্পর্ক নেই। সিলেটের বালাগঞ্জের তাজপুরের সন্তান রুশো 'ঠিকানা'কে অন রেকর্ড আরও বলেন, এ বছরের জুন মাসে আঁখি ঢাকায় যায় এবং তারপরই ঝামেলার সূত্রপাত। রুশো বলেন, অাঁখি এখন আর স্বীকার করতে চায় না যে আরিয়া আমার সন্তান। সে নাকি তার আগের স্বামীর (যার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তালাক দিয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছিল) কাছে ফিরে গেছে এবং সে লোকটিও তাকে গ্রহণ করেছে। রুশো বলেন, এরপর আমি অনেকবার ফোন করেছি আঁখিকে, কিন্তু সে নম্বর পরিবর্তন করেছে। রুশো অভিযোগ করেন, অাঁখি আমার আত্মীয়-স্বজনকে হুমকি দিচ্ছে নানাভাবে। আমি এসব হুমকিকে কেয়ার করি না, আমি শুধু আমার সন্তানকে ফিরে চাই। আরিয়া আমার সন্তান কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি ডিএনএ টেস্টের চেষ্টা করছি। কিন্তু অাঁখি ও তার মা-বাবা রাজি হচ্ছেন না। আমি আমেরিকার সিটিজেন হিসেবে আমার সন্তানের (অাঁখির বক্তব্য এবং নিউ ইয়র্কে আমার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে অবস্থানের মেয়াদ অনুযায়ী) অধিকার আদায় করতে বদ্ধপরিকর। আরিয়া যদি আমার সন্তান না হয়ে থাকে তাহলে কোন কথাই বলবো না। ভাববো, অাঁখি আমার জীবনে একটি দুঃস্বপ্ন। আর ডিএনএ টেস্টের পর যদি প্রমাণিত হয় যে আরিয়া আমার ঔরসজাত সন্তান তাহলে আমি সে অধিকার ছাড়বো কেন? কমু্যনিটি এবং বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রুশো বলেছেন, আমি যদি আরিয়ার পিতা হয়ে থাকি তাহলে অাঁখির এহেন আচরণের বিচার করম্নন আপনারা। অর্থকড়ি কিছুই চাই না অাঁখির কাছে, শুধু আমার আরিয়াকে ফেরত চাই। রুশো অভিযোগ করেছেন যে অাঁখির অভিভাবকরা মাস্তান ভাড়া করেছেন আমাকে এবং আত্মীয়-স্বজনকে হেনস্তা করার জন্য। ইতিমধ্যেই তারা ভয়-ভীতিও প্রদর্শন করে চলেছে। নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের দু'ব্যক্তি আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এরপর তারা হাওয়া হয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে ঢাকায় টেলিফোনে অাঁখি আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়। কিন্তু টেলিফোনে তাকে পাওয়া যায়নি বলেও 'ঠিকানা'য় প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment