তারকাদের নিয়ে কাজ করেন তিনি, এরকম অনেকেই করেন। কিন্তু তিনি সবার মতো না। একেবারেই অন্যরকম। এ কারণে হয়ে উঠেছেন নিজ ক্ষেত্রের তারকা ফটোগ্রাফার। কেউ বলেন, তিনি তারকাদের তারকা, কেউ বলেন, ক্যামেরার তারকা...। লিখেছেন মোস্তাক আহমেদ
ফটোগ্রাফি করে পেট চালানো যায় - এ কথা এক সময় হয়তো কেউ বিশ্বাস করতে চাইতো না। এর অবশ্য নির্দিষ্ট কিছু কারণও ছিল। সে সময় আমাদের শোবিজ অঙ্গন ছিল সীমিত পরিসরে। কিন্তু ধীরে ধীরে বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। শোবিজ অঙ্গন বড় হওয়ার সঙ্গে বেড়েছে শোবিজ কর্মীদের সংখ্যাও। মডেল হওয়ার জন্য প্রথমেই যেতে হয় ফটোগ্রাফারের কাছে। শুধু তাই নয়, একজন মডেল নিজেকে নানাভাবে উপস্থাপন করতে চাইলে দ্বারস্থ হতে হয় দক্ষ ফটোগ্রাফারের। চাহিদা অনুযায়ী বেড়েছে ফটোগ্রাফারের সংখ্যাও। অনেকেই আগ্রহী হয়ে শখ করে ফটোগ্রাফিকে এখন পেশা হিসেবে নিচ্ছে। স্টাইল আর ফ্যাশন যত এগুবে ফটোগ্রাফির কদর বাড়বে ততই। যেমন বেড়েছে মডেল ফটোগ্রাফির তারকা ফটোগ্রাফার আশীষ সেন গুপ্ত'র কাজের কদর।
খুব অল্প সময়ে শোবিজের মানুষদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন মডেল ফটোগ্রাফার আশীষ সেন গুপ্ত। তারকাদের প্রিয় আশীষদা। এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ফটোগ্রাফার এবং শোবিজ জগতের বাসিন্দাদের কাছে 'হার্টথ্রব'। সকাল থেকে মধ্যরাত শোবিজের মানুষদের ছবি তোলা নিয়েই তার ব্যস্ততা। ক্যামেরার ফ্রেমে নানা ভঙ্গিমায় বন্দি করে চলেছেন তারকাদের। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ আশীষ সেন গুপ্ত। ডাক নাম রুপু। জন্ম চট্টগ্রামের রাউজানের কোয়েপাড়া গ্রামে। ছোটবেলা কেটেছে প্রকৃতির সৃষ্টি অবারিত সৌন্দর্যের মাঝেই। হয়ে উঠেন প্রকৃতিপ্রেমী। অনেকটা শখের বসেই পাহাড় সবুজ ঘেরা অরণ্যের ছবি তোলা শুরু করেন আশীষ। পাহাড়, পাখি, প্রজাপতি, সবুজ অরণ্য হয়ে উঠে তার ছবি তোলার বিষয়। শুরুতে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে। কঠোর অধ্যবসায় এবং প্রতিভা মানুষকে সাফল্য এনে দেয় - একথা প্রমাণ করে দিয়েছেন আশীষ।
ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স শেষ করার পর ঢাকায় এসে ভাই অসীম সেন গুপ্তের এডভার্টাইজিং অফিসে যোগ দেন। তাদের কোম্পানির স্টিল ফটোগ্রাফার মরহুম আহমেদুর রহমান খোকার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। মনের সুপ্ত বাসনাটি আবার নাড়াচাড়া দিয়ে উঠে। এর মধ্যে বেগ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নেন। তারপর ভাই অসীমের অনুপ্রেরণায় আশীষের জীবনে একদিন আসে স্বপ্ন পূরণের সেই ক্ষণ। যার অপেক্ষায় বহুদিন কাটিয়েছেন তিনি। ২০০৪ সালে ২ জুন যাত্রা শুরু করে আশীষের কাঙ্ক্ষিত ফটোগ্রাফার প্রশিক্ষণ আইক্লিক।
আশীষের প্রথম স্টেজ ফটোগ্রাফি ছিল জাতীয় জাদুঘরে সাদি মহম্মদের একক সঙ্গীত সন্ধ্যা। তারপর ছবি তোলেন ভারতীয় হাইকমিশনের হয়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠান করতে আসা কিংবদন্তিতুল্য সঙ্গীতজ্ঞ বিসমিল্লাহ খান। নৃত্যশিল্পী প্রিয়দর্শিনী গোবিন্দ এবং অভিনেতা ও আবৃত্তিকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। এ প্রসঙ্গে আশীষ সেন গুপ্ত বলেন, এক্ষেত্রে আমার গুরু ফটোগ্রাফার খোকা ভাই। তার অনুপ্রেরণায় আর উৎসাহই আমাকে প্রফেশনাল ক্যামেরাম্যান করে তুলেছে।
'আইক্লিক' নামকরণের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে আমার কাছে মনে হয় - যে কারও আবেগ-অনুভূতি বহিঃপ্রকাশের সবচেয়ে সক্রিয় ইন্দ্রিয় হচ্ছে চোখ। সত্যিই চোখ মনের কথাই বলে। আর তাই স্টুডিওর নামকরণের ক্ষেত্রে চোখকেই প্রাধান্য দিয়েছি।
সেলিব্রেটিদের মধ্যে প্রথম ফটোসেশন করেন চিত্র নায়িকা মৌসুমীর। এভাবেই এক দুই করে এ অঙ্গনে ব্যস্ত এক তারকা বনে যান আশীষ সেন গুপ্ত। হয়ে উঠেন তারকাদের তারকা বা ক্যামেরার তারকা। এখন ছবি তোলাই যার ধ্যান-জ্ঞান। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আইক্লিক'কে আরও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
No comments:
Post a Comment