11 March 2010

দেশে ফিরেই বিব্রত রিচি

বিমান জার্নির ঘোর এখনও কাটেনি আরামপ্রিয় রিচি সোলায়মানের। চার মাস পর গেল চারদিন আগে তিনি ঢাকায় ফিরেছেন। নতুন সংসার এবং স্বামীর কাছ থেকে তিন মাসের মৌখিক ছুটি নিয়ে তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। ফেরা প্রসঙ্গে ঘুমাতুর কণ্ঠে মজা করে এমনটাই জানালেন ছোট পর্দার শীর্ষ সারির এই প্রিয়মুখ। ২০০৮ সালের ১৪ই ডিসেম্বর অনেকটা আচানক আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের ঘোষণা দেন রিচি। স্বামী রাশেক মালিক। যিনি আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে শেষ ক’বছর ধরে কর্মরত আছেন সেখানকার ‘এনওয়াইপিডি’তে। এরপর টানা নয় মাস নিয়মিত অভিনয় ধারা অব্যাহত রাখলেও গেল বছর ১ নভেম্বর রিচি অনেকটা নীরবে উড়াল দেন আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে, স্বামীর কাছে। কেমন কাটলো বিদেশ-বিভুঁইয়ে সংসার জীবনের টানা চার মাস? একা একা অকাট্য অবসর কাটালেন কেমন করে? এমন প্রশ্নে রিচির জবাব বেশ পজেটিভ। তিনি বলেন, মূলত আমি কিন্তু প্রচণ্ড অলসপ্রিয় মানুষ। সারাদিন নির্ঝঞ্ঝাট ব্যসত্মহীন কাটাতে পারলেই যেন বাঁচি। এ চার মাসে খুব যে আপনার ভাষায় অকাট্য অবসরে ছিলাম তা কিন্তু নয়। ভিনদেশে বসে নিজের সংসারটাকে প্রথম থেকে পুরোপুরি গোছানো চাট্টিখানি কথা নয় কিন্তু! সেখানে তো আর এখানকার মতো এক বাসায় তিন-চারটে তো দূরের কথা একজন করেও কাজের মানুষ থাকে না। সবকিছুই করতে হয় আমাদের দু’জনকে ভাগাভাগি করে। এর সঙ্গে আমিও যদি চাকরি-বাকরি করতাম তাহলে তো কথাই ছিল না। নতুন সংসার গোছানোর মুগ্ধতা নিয়ে রিচি আরও বলেন, এটা বোধহয় মানসিক একটা ব্যাপার। তা না হলে একা একা সংসারের রান্না-বান্না-ধোয়া-মোছা-শপিং এতকিছু গেল চার মাস করলাম কি করে? বিশ্বাস করবেন না, এসব কাজ আমি দেশে থাকতে খুব একটা করিনি, তবুও নিজের সংসারেরগুলো করতে গিয়ে একটুও ক্লানিত্ম কিংবা বিরক্তিকর মনে হয়নি। আবার এটাও ঠিক, দেশে থাকতে শুধু শুটিং সিডিউল নিয়ে সকাল সাতটা থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যনত্ম যেভাবে শুটিং নিয়ে ব্যসত্ম থাকতে হতো, সে হিসাবে সংসারের কাজ চড়ুইভাতি খেলার মতোই। সেখানে বসে প্রায়শই আমি অবাক হতাম, ঢাকায় রাত-দিন এত কাজ কি করে করতাম! অথচ আমেরিকার জীবনে আমি অলস-ব্যসত্মতাহীন-আরামপ্রিয় একজন মানুষে পরিণত হয়ে উঠেছি চোখের পলকে। রিচির কাছে জিজ্ঞাসা ছিল, এই যে হঠাৎ করে অভিনয়হীন চার দেয়ালের প্রবাস জীবন, খারাপ লাগতো না? অভিনয়-ব্যসত্মতা-জনপ্রিয়তাগুলোকে মিস করতেন না? এমন জিজ্ঞাসায় মিথ্যার প্রশ্রয় নেননি এক ফোঁটাও। স্পষ্ট করেই রিচি মুখের ওপর বলে দিলেন- না, মিস করিনি। এর জন্য আমাকে স্বার্থপর ভাবলেও এটাই সত্যি। মিস করিনি। বরং আমি আমার সংসার গোছানোর কাজটাকে বেশি উপভোগ করেছি। তবে এটা ঠিক, অবসরে প্রায়ই আমার অভিনয় কলিগদের কথা, তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা মজার মজার ঘটনা মনে পড়তো। এর বেশি কিছু না। এ যাত্রায় রিচি দেশে থাকছেন প্রায় মাস তিনেক। এর বেশি থাকবেন না। এর মধ্যে বেশ কিছু নাটকে কাজ করবেন তিনি। যোগাযোগ এরমধ্যে হয়েছে অনেকের সঙ্গে। অনেকেই পাণ্ডুলিপি পাঠাচ্ছেন রিচির বাসায়। এর মধ্যে আবুল হায়াত এবং চয়নিকা চৌধুরীর দুটি এক ঘণ্টার নাটকে অভিনয় করার কথা চূড়ানত্ম করেছেন। তবে এখনও ক্যামেরার সামনে দাঁড়াননি। আরও ক’টা দিন মা-বন্ধু-আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে ঘরোয়া আলাপে কাটাতে চান। তাহলে কবে থেকে শুটিং শুরম্ন করছেন? রিচি বলেন, সব ঠিক থাকলে ২০ তারিখ থেকে আবার পুরনো অধ্যায়ের পুরনো জীবন নতুন করে শুরম্ন হচ্ছে। ইচ্ছে আছে দেশ ছাড়ার আগে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘নীলাঞ্জনা’র ব্যানারে আসন্ন ঈদের জন্য নিদেনপড়্গে তিনটি নাটক নির্মাণ করার। আপাতত এক ঘণ্টার নাটকের ওপর সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছেন রিচি সোলায়মান। ধারাবাহিক হলেও সেটা ১৩ পর্বের ওপরে নিতে চাচ্ছেন না। দীর্ঘ ধারাবাহিকে রিচির এমন অনাপত্তির জের ধরে এরই মধ্যে ঘটেছে একটি আপত্তিকর গুঞ্জন। যে বিষয়টিকে রিচি বিবেচনা করছেন নিতানত্মই দুর্ভাগ্যজনক এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা হিসেবে। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে রিচি বলেন, মাহফুজ ভাই (অভিনেতা-পরিচালক মাহফুজ আহমেদ) আমাকে তার একটি ধারাবাহিকে অভিনয়ের কথা বলেছেন। আমিও স্পষ্ট করে হ্যাঁ-না কিছু বলিনি। পরে দেখলাম এটি ১০৪ পর্বের দীর্ঘ ধারাবাহিক। আমি না করার সিদ্ধানত্ম জানালাম। বললাম, আমি আমার সংসার ফেলে এত লম্বা নাটকের সঙ্গে জড়াতে চাই না। ব্যস এটুকুই। এমন কথা দু’দিন বাদে একটি পত্রিকাসহ বিভিন্নজনের মুখে মুখে ফিরতে লাগলো আমি নাকি প্রেগনেন্ট। এ কারণে দীর্ঘ ধারাবাহিকে অভিনয় করছি না। যে পত্রিকাটি আমার মনত্মব্য না নিয়ে এমন ডাহা মিথ্যা সংবাদটি ছাপালো, সেখানে যোগাযোগ করে বিনোদন বিভাগীয় প্রধানের কাছে জানতে পারলাম এই সংবাদ নাকি মাহফুজ ভাইয়ের ইউনিট থেকে তারা পেয়েছেন। একই রেফারেন্স আমি আরও অনেকের কাছ থেকেও পেয়েছি-পাচ্ছি। মাহফুজ ভাই এমনটা না করলেও পারতেন। এমন কাঁচা মিথ্যা কথা মানুষ কেমন করে বলতে পারে আমার বোধগম্য নয়। এই যদি হয় আমাদের মিডিয়া কালচার, তাহলে আর কি বলার আছে! আমি এ নিয়ে প্রচণ্ড হতাশ এবং বিব্রত। কারণ, পত্রিকার সংবাদ পেয়ে আমার শ্বশুরবাড়ির মানুষরা আমাকে কী ভাবছে বলুন তো! তারা তো আর মিডিয়ার এতসব মার-প্যাঁচের কথা জানেন না। উল্টো রেগে আছেন, এমন সুখ সংবাদ তাদের কাছে গোপন রেখেছি বলে! এটা না হয় মিথ্যা রটনা। সত্যি সত্যি মা হচ্ছেন কবে? রিচি বলেন, আপাতত নয়। আরও কিছু সময় নিতে চাই। আর এমন সুসংবাদ তো জানাবোই। বিয়ের সময় যেমন ঘটা করে জানিয়েছি।

No comments:

Post a Comment