07 April 2010

শোয়েব-সানিয়া-আয়েশা ত্রিভুজ প্রেমে নতুন মোড় শোয়েবের পাসপোর্ট আটক : ভারত ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

হায়দরাবাদে মির্জা বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন সানিয়া ও শোয়েব -এএফপি
সানিয়া-শোয়েব-আয়েশার প্রেমকাহিনী নতুন মোড় নিয়েছে। ভারতের হায়দরাবাদে সানিয়া মির্জার বাড়িতে অবস্থানরত শোয়েবকে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশ শোয়েবের পাসপোর্ট জব্দ করে এবং কথিত স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকীর করা মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে ভারত ছেড়ে যেতে নিষেধ করে। এরই মধ্যে গতকালই গণমাধ্যমে নতুন বোমা ফাটান আয়েশা। তিনি দাবি করেন, শোয়েবের সঙ্গে বিয়ের পর তিনি তার শয্যাসঙ্গী হয়েছেন এবং গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তবে ওই সনত্দান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই গর্ভপাত (মিস ক্যারিয়েজ) হয়ে যায়। সূত্র : এএফপি, কলকাতা প্রতিনিধি, এনডিটিভি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, জি নিউজ, আইএএনএস
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সানিয়া মির্জার (২৩) সঙ্গে শোয়েব মালিকের বিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ১৫ এপ্রিল হায়দরাবাদেই তাদের বিয়ের পরিকল্পনা করা হয়। প্রতিবেশী দুই দেশের খ্যাতনামা এ দুই ক্রীড়া তারকার বিয়ে নিয়ে ভারত-পাকিসত্দানসহ উপমহাদেশ তো বটেই পুরো ক্রীড়াজগতে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু হায়দরাবাদেরই আরেক তারুণী আয়েশার নিজেকে শোয়েবের স্ত্রী দাবি, পুরো ব্যাপারটি নিয়ে স্ক্যান্ডালের জন্ম দিয়েছে।
অন্ধ্র প্রদেশের পুলিশ প্রধান আর আর গিরিশ কুমার গতকাল সকালে হায়দরাবাদের বানজারা হিলসে সানিয়া মির্জাদের বাড়িতে শোয়েবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর সানিয়াদের বাড়ির সামনে সমবেত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আয়েশার পরিবার শোয়েবের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। শোয়েবের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে এবং পুরো ব্যাপারটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে হায়দরাবাদ ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে কার্যত সানিয়া মির্জার বাড়িতে আপাতত গৃহবন্দি শোয়েব। দুবাই থেকে শনিবার হায়দরাবাদে এসে সানিয়াদের বাড়িতে ওঠেন তিনি।শোয়েবকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ জানায়, এটা এখন তাদের অগ্রাধিকার নয়, আগে শোয়েবের বিরুদ্ধে আনা তদন্ত হবে, তারপরই পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। পরে এ প্রসঙ্গে শোয়েবের আইনজীবী মিনা জানান, শোয়েবকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়- এ মর্মে অন্ধ্র প্রদেশের হাইকোর্টে একটি আবেদন দাখিলের প্রস্তুতি চলছে। পুুলিশ গতকাল সকালে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে শোয়েবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে জানা গেছে।
পুলিশ শোয়েবকে যে প্রশ্নগুলো করে সেগুলো হচ্ছে- ১. শোয়েব কি ২০০৫ সালে আয়েশার সঙ্গে হায়দরাবাদের হোটেল তাজ রেসিডেন্সি হোটেলে অবস্থান করেছিলেন? ২. দুবাইয়ে কি তাদের (শোয়েব-আয়েশা) দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছিল? ৩. শোয়েব কি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সদস্যদের নিয়ে আয়েশাদের বাড়িতে একটি পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন? ৪. মুখ বন্ধ রাখার জন্য তিনি কি আয়েশাকে ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন? এবং ৫. আয়েশার সঙ্গে টেলিফোনে বিয়ের সাক্ষী কারা ছিলেন?এসব প্রশ্নের পাশাপাশি আয়েশার সঙ্গে শোয়েবের দেখা সাক্ষাতের কয়েকটি সিডি এবং ছবিও তাকে দেখায় পুলিশ।পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে শোয়েব ঠিক কী বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানা না গেলেও বিভিন্ন সূত্র জানায়, শোয়েব দাবি করেছেন, আয়েশার সঙ্গে তার বিয়ের প্রমাণস্বরূপ সরবরাহ করা 'নিকাহনামায়' তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।
হায়দরাবাদ পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, শোয়েবের বিবৃতি রেকর্ড করা হয়েছে। দেড় ঘণ্টা ধরে জেরার জবাবে শোয়েব পুলিশকে বলেছেন, তিনি প্রতারণা শিকার। অন্য মেয়ের ছবি দেখিয়ে তার সঙ্গে আয়েশার বিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে শোয়েব তাদের সহযোগিতা করেন এবং সানিয়াও শোয়েবকে সাহায্য করেন বলে জানায় পুলিশ।এদিকে শোয়েবকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার জের ধরে গতকাল দুপুরেই পুলিশ আয়েশা সিদ্দিকীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের কাছে আয়েশা অভিযোগ করেন, তিনি নির্যাতিত ও প্রতারিত। সেই সঙ্গে তিনি যে শোয়েব মালিকের স্ত্রী তার বেশকিছু প্রমাণপত্রও পুলিশের হাতে তুলে দেন আয়েশা। দুই তরফে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ কর্তারা বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনায় বসেন। দুপুরের পর পুলিশ আবারো শোয়েবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।হায়দরাবাদ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শোয়েব-আয়েশার বিয়ের সাক্ষী হিসেবে ভারতীয় পুলিশ সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক আজহারউদ্দিন এবং তার স্ত্রী সঙ্গীতা বিজলানিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। অবশ্য শোয়েব ও আয়েশাকে হায়দরাবাদের হোটেল তাজ রেসিডেন্সি হোটেলে দেখার খবর অস্বীকার করেছেন আজহার।
শোয়েবের সনত্দান গর্ভে ধারণের দাবি আয়েশারনিজেকে শোয়েবের স্ত্রী দাবি করার পর গতকাল নতুন আরেকটি বোমা ফাটিয়েছেন আয়েশা। শোয়েবের সন্তান গর্ভে ধারণের দাবি করেছেন তিনি। ভারতের একটি শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক আয়েশার বরাত দিয়ে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে।একইদিন ভারতের জি নিউজকে আয়েশা জানান, বিয়ের পর তিনি শোয়েবের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় অতিবাহিত করেছেন। বিয়ের পর শোয়েব যখনই ভারতে এসেছেন তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটিয়েছেন বলে দাবি করেন আয়েশা। তবে গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বলে আয়েশা জানান, হায়দরাবাদের ড. ফাতিমা ছিলেন তার গাইনিকোলজিস্ট। দাবির সপক্ষে জোরালো প্রমাণ আছে বলেও জানান তিনি।আয়েশা আরো বলেন, তিনি কেবল প্রমাণ করতে চান, শোয়েব এবং তার পরিবার তাদের বিয়ে নিয়ে যা কিছু বলছে তা ডাহা মিথ্যা।তবে গতকাল বিকালে সানিয়াদের বাড়িতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আয়েশার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন শোয়েব। এ সময় সানিয়াও উপস্থিত ছিলেন।আয়েশার অভিযোগকে দুঃখজনক অভিহিত করে তা প্রমাণের জন্য আয়েশার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন শোয়েব।পুরো ব্যাপারটিকে 'পীড়াদায়ক' মন্তব্য করে সানিয়াও শোয়েবের কথার পুনরাবৃত্তি করেন।
'সানিয়ার সঙ্গে শোয়েবের বিয়ে ঠেকাও'আয়েশার বাবা মোহাম্মদ সিদ্দিকী রোববার তার মেয়ের পক্ষে শোয়েবের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদে একটি ফৌজদারি মামলা করেন।মামলার এফআইআরে সানিয়া মির্জার সঙ্গে শোয়েবের বিয়ে ঠেকানোর দাবি করে বলা হয়, যেহেতু আয়েশা আইনগতভাবে শোয়েবের স্ত্রী সেহেতু এ বিয়ে হতে পারে না।আয়েশা আরো দাবি করেন, মুখ বন্ধ রাখার শর্তে শোয়েব তাকে ১০ লাখ ডলার ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন। মুখ খুললে শোয়েব তার ও তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দেন বলেও দাবি করেন আয়েশা।হায়দরাবাদের পুলিশ কমিশনার এ কে খান জানান, আয়েশারা শোয়েবের বিরুদ্ধে প্রতারণা, দেনমোহর নিয়ে হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এনেছেন।তবে আয়েশার আইনজীবী বলেছেন, শোয়েব যদি সব কিছুর জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। গতকাল হায়দরাবাদে আয়েশাদের বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।ওদিকে পাকিস্তানে আয়েশার আইনজীবী ফারুক হাসান জানিয়েছেন, শোয়েবের বিরুদ্ধে পাকিস্তানেও মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। তার কাছে আয়েশার সঙ্গে শোয়েবের বিয়ের 'জোরালো প্রমাণ' রয়েছে বলেও দাবি করেন ফারুক।আয়েশার সঙ্গে গতকালই তার টেলিফোনে কথা হয়েছে এবং সে সময় আয়েশা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে জানান ফারুক।
শোয়েবের পাশে দাঁড়াবে পাকিস্তানপাকিস্তান সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিককে নিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় তারা ভারতীয় কতর্ৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল বাসিত গতকাল মিডিয়াকে জানান, ভারতে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ভারতীয় কতর্ৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।বাসিত আরো বলেন, পাকিস্তান শোয়েবকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। শোয়েবের পাশে দাঁড়াতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।ভারতে পাকিস্তানি হাইকমিশন থেকেও বলা হয়, শোয়েব যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে তাকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দিতে হাইকমিশন প্রস্তুত রয়েছে।এদিকে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানে শোয়েব মালিকের পরিবার ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করছে বলে জানা গেছে। ১৫ এপ্রিল শোয়েব-সানিয়ার বিয়ে উপলক্ষে বুধবার (কাল) তাদের ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। শোয়েবের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, পুরো পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ভারতে পাকিস্তান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।ভারতের বেশ কয়েকটি মহল যে কোনো মূল্যে শোয়েব ও সানিয়ার বিয়ে প্রতিহত করতে উঠেপড়ে লেগেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

No comments:

Post a Comment