
আজ ৩১ অক্টোবর উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতজ্ঞ শচীন দেববর্মনের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই বাংলাই তাঁকে ‘জনম’ দিয়েছে। ১৯৭৫ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু রেখে যান অফুরান সৃষ্টি। ১৯০৬ সালে শচীন দেববর্মন কুমিল্লা শহরের উত্তর চর্থায় জন্মগ্রহণ করেন। ত্রিপুরার আগরতলা রাজপরিবারের সন্তান হলেও তাঁর যাপিত জীবন ছিল একেবারেই সাদামাটা। তিনি ‘শচীনকর্তা’ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। অসাধারণ পরিবারের সন্তান হয়েও সাধারণ পরিবারের মানুষকে আপন করে নিতেন। ‘টিপরাই বাঁশি’ বাজিয়ে মাটির ঘ্রাণ নিতেন। গানের পাশাপাশি খেলা ও মাছ ধরা ছিল তাঁর নেশা। লোকসংগীতের অন্তঃপ্রাণ ওই শিল্পীর গানে গানেই তাঁর চরিত্র ফুটে ওঠে। ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই’, ‘ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা’, ‘তাক্দুম তাক্দুম বাজাই’, ‘প্রেম যমুনার পাড়ে’, ‘তুমি যে গিয়াছ বকুল-বিছানো পথে’, ‘রঙ্গিলা রঙ্গিলা রঙ্গিলা রে, ‘ওরে সুজন নাইয়া’, ‘পদ্মার ঢেউ রে’-সহ অসংখ্য গান এখনো তারুণ্যকে উদ্দীপ্ত করে। তাঁর মৃত্যুর ৩৬ বছর পরও সংগীত-অন্তঃপ্রাণ ব্যক্তিদের কাছে মরমি কবির সৃষ্টি চির অম্লান হয়ে আছে।
শচীন দেববর্মনের বাবার নাম নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মন, মা নিরুপমা দেবী। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু হয় আগরতলার ‘কুমার বোর্ডিং’য়ে। পরে তিনি কুমিল্লা জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯২০ সালে ওই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯২১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। ১৯২২ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ১৯২৪ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯২৫ সালে তিনি কলকাতায় যান ইংরেজিতে এমএ পড়তে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। এক বছর পড়ার পর পড়াশোনা লাটে ওঠে। ১৯২৫ সালে অন্ধ গায়ক শ্রীকৃষ্ণ চন্দ্র দের কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শেখা শুরু করেন। পরে বাবার আগ্রহে কলকাতা আইন কলেজে ভর্তি হন আবার। কয়েক মাস পর আইন পড়াও ছেড়ে দেন।
১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গানের শিল্পী মীরা দেবীকে বিয়ে করেন। তাঁদের একমাত্র পুত্রসন্তান রাহুল। ১৯৪৪ সাল থেকে তিনি বম্বেতে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। তিনি ৮০টির বেশি হিন্দি ছবিতে সুরারোপ করেন। তাঁর সুরে গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, সন্ধ্যা মুখার্জি, মান্না দে, কিশোরকুমার প্রমুখ। পেয়েছেন ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ পদক। তা ছাড়া গান ও নাটকের জন্য ভূষিত হয়েছেন আকাদেমি পুরস্কার ও এশিয়ান ফিল্ম সোসাইটির সম্মাননাতেও। ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর তিনি পরলোকগমণ করেন।
কুমিল্লা শহরে ৬০ বিঘা জমির ওপর শচীন দেববর্মনের বাড়ি। গাছগাছালি আর ফুলের বাগানের অপূর্ব সমন্বয়ে বাড়িটি ছিল নান্দনিক। এ বাড়িতে রাতভর গান হতো। দুই বাংলার শিল্পীরা এসে গান গাইতেন। এ বাড়িতেই তাঁর শৈশব ও কৈশোরের দুরন্ত সময় কাটে। বাড়ির অদূরের গোমতী নদী, এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরে বেড়ানো, গলা ছেড়ে গান গাওয়া কিংবা দূরে হারিয়ে যাওয়া—এসব পাগলামি করতেন তিনি। বরেণ্য ওই সংগীত পরিচালক, সুরকার ও গায়কের অমর সৃষ্টি সম্পর্কে এ প্রজন্ম কতটুকু জানে, সেটা খুঁজে দেখার সময় এসেছে। কুমিল্লার সংস্কৃতিকর্মীরা তাঁর বাড়ি ও কর্মকে ধারণ করার দাবি জানান।
এদিকে চলতি বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রথমা প্রকাশন থেকে শচীন দেববর্মনকে নিয়ে সরগমের নিখাদ নামের একটি সংকলন বের করা হয়। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আবুল আহসান চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশিত ওই সংকলনের মুখবন্ধে স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী লিখেছেন, ‘১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শচীন দেব বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর প্রিয় কুমিল্লা, প্রিয় বাংলাদেশ ধর্ষিত হচ্ছে, সেই বেদনাবোধ থেকে তাঁর আগের গাওয়া “তাকডুম তাকডুম বাজে, বাজে ভাঙা ঢোল” গানটি ঈষৎ পরিবর্তন করে নতুন করে গাইলেন, “তাকডুম তাকডুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল, ও মন যা ভুলে যা কি হারালি বাংলা মায়ের কোল”। স্ত্রী মীরা দেববর্মনের লেখা এ গান গেয়েই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেন শচীন দেব। প্রিয় শহর কুমিল্লা, প্রিয় বন্ধু-সান্নিধ্য, স্মৃতিতাড়িত শচীন দেব ভুলে যেতে চাইলেন এই বলে “ও মন যা ভুলে যা কি হারালি, ভোল রে ব্যথা ভোল”—আমাদেরও ব্যথাতুর করে তোলে।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আমীর আলী চৌধুরী বলেন, তাঁর বাড়িটি সংস্কার, সংরক্ষণ করতে হবে। তাঁর সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মাটির গানকে লালন করতে হবে।
গুণী ওই শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকীতে রইল শ্রদ্ধাঞ্জলি।
শচীন দেববর্মনের বাবার নাম নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মন, মা নিরুপমা দেবী। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু হয় আগরতলার ‘কুমার বোর্ডিং’য়ে। পরে তিনি কুমিল্লা জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯২০ সালে ওই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯২১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। ১৯২২ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ১৯২৪ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯২৫ সালে তিনি কলকাতায় যান ইংরেজিতে এমএ পড়তে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। এক বছর পড়ার পর পড়াশোনা লাটে ওঠে। ১৯২৫ সালে অন্ধ গায়ক শ্রীকৃষ্ণ চন্দ্র দের কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শেখা শুরু করেন। পরে বাবার আগ্রহে কলকাতা আইন কলেজে ভর্তি হন আবার। কয়েক মাস পর আইন পড়াও ছেড়ে দেন।

কুমিল্লা শহরে ৬০ বিঘা জমির ওপর শচীন দেববর্মনের বাড়ি। গাছগাছালি আর ফুলের বাগানের অপূর্ব সমন্বয়ে বাড়িটি ছিল নান্দনিক। এ বাড়িতে রাতভর গান হতো। দুই বাংলার শিল্পীরা এসে গান গাইতেন। এ বাড়িতেই তাঁর শৈশব ও কৈশোরের দুরন্ত সময় কাটে। বাড়ির অদূরের গোমতী নদী, এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরে বেড়ানো, গলা ছেড়ে গান গাওয়া কিংবা দূরে হারিয়ে যাওয়া—এসব পাগলামি করতেন তিনি। বরেণ্য ওই সংগীত পরিচালক, সুরকার ও গায়কের অমর সৃষ্টি সম্পর্কে এ প্রজন্ম কতটুকু জানে, সেটা খুঁজে দেখার সময় এসেছে। কুমিল্লার সংস্কৃতিকর্মীরা তাঁর বাড়ি ও কর্মকে ধারণ করার দাবি জানান।
এদিকে চলতি বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রথমা প্রকাশন থেকে শচীন দেববর্মনকে নিয়ে সরগমের নিখাদ নামের একটি সংকলন বের করা হয়। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আবুল আহসান চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশিত ওই সংকলনের মুখবন্ধে স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী লিখেছেন, ‘১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শচীন দেব বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর প্রিয় কুমিল্লা, প্রিয় বাংলাদেশ ধর্ষিত হচ্ছে, সেই বেদনাবোধ থেকে তাঁর আগের গাওয়া “তাকডুম তাকডুম বাজে, বাজে ভাঙা ঢোল” গানটি ঈষৎ পরিবর্তন করে নতুন করে গাইলেন, “তাকডুম তাকডুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল, ও মন যা ভুলে যা কি হারালি বাংলা মায়ের কোল”। স্ত্রী মীরা দেববর্মনের লেখা এ গান গেয়েই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেন শচীন দেব। প্রিয় শহর কুমিল্লা, প্রিয় বন্ধু-সান্নিধ্য, স্মৃতিতাড়িত শচীন দেব ভুলে যেতে চাইলেন এই বলে “ও মন যা ভুলে যা কি হারালি, ভোল রে ব্যথা ভোল”—আমাদেরও ব্যথাতুর করে তোলে।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আমীর আলী চৌধুরী বলেন, তাঁর বাড়িটি সংস্কার, সংরক্ষণ করতে হবে। তাঁর সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মাটির গানকে লালন করতে হবে।
গুণী ওই শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকীতে রইল শ্রদ্ধাঞ্জলি।
No comments:
Post a Comment