শেওড়াফুলির একটা হলে উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত 'অগি্নপরীক্ষা' ছবিটি দেখতে গিয়েছিলাম। তা ১৯৫৪ সালের কথা। সেই সময় ওই ছবিটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে বিরাট উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছিল। হলের বাইরে প্রচ- ভিড়। টিকিটের জন্য হাহাকার। আমার সঙ্গে আরো কয়েকজন ছিলেন। হুড়োহুড়ির মধ্য দিয়ে কোনোরকমে টিকিট জোগাড় করে ছবিটি দেখলাম। বেশ ভালো লেগেছিল 'অগি্নপরীক্ষা'। এরপর বেশ কিছু দিন উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিসিজম আমাকে ঘিরে রেখেছিল। রমাদির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় সিঁথির মোড়ে এমপি স্টুডিওতে। তখন 'সাড়ে চুয়াত্তর' ছবির শুটিং চলছে। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন পরিচালক নির্মল দে। নির্মল দার 'বসু পরিবার' ছবিতে আমি প্রথম কাজ করেছিলাম। যা হোক, রমাদির সঙ্গে তো আলাপ হলো। ভদ্র মহিলার সৌন্দর্যের থেকে ব্যক্তিত্বই আমাকে আকর্ষণ করেছিল বেশি। এরপর ধীরে ধীরে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাকে আমি রমাদি বলেই ডাকতাম। তাকে নিয়ে এ মুহূর্তে কত কথাই না মনে পড়ছে। একবার চাঁদিপুরে 'হার মানা হার' ছবিতে আমি অভিনয় করিনি। তবে সেখানে উত্তমের সঙ্গে এমনিই গিয়েছিলাম। দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা চলছে। উত্তম বায়না ধরল চাইনিজ খাবে। চাইনিজ রান্নার ভার পড়ল আমার ওপর। খাওয়ার পরে আমরা বিশ্রাম নিই। ধীরে ধীরে বেলা পড়ে আসে। তাই উত্তম সোজা দোতলায় উঠে গেল। বেশ খানিকক্ষণ পর আমি দোতলায় যাই। সেখানে গিয়ে দেখি চা পানের বিশাল আয়োজন। গান-টান হচ্ছে। উত্তম আর রমাদি একসঙ্গে নাচতে লাগল। রমাদি নাচতে নাচতেই আমাকে বলল, 'কী উত্তমের সঙ্গে আমাকে এ অবস্থায় দেখে তোমার হিংসে হচ্ছে না তো?' রমাদির কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম। তারপর বললাম, বহুদিন থেকেই তোমাদের দেখছি। তোমাদের প্রেম, তোমাদের ভালোবাসা, তোমাদের বিরহ, তোমাদের নাচ-গান, তোমাদের পরস্পরের কাছাকাছি আসা পর্দায় দেখে দেখে আমার চোখ সয়ে গেছে। আমার মনে হয় সুচিত্রা-উত্তমের পর্দার ক্যামিস্ট্রি সব জাগতিক চাওয়া-পাওয়ার ঊধর্ে্ব। আসলে ওরা দুজন খুব ভালো বন্ধু ছিল। আমাদের ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে রমাদি কতবার এসেছেন! আমরা তিনজন একসঙ্গে অসংখ্যবার লাঞ্চ করেছি, ডিনার করেছি এবং আড্ডা মেরেছি। আমি বেশ কবার রমাদির বাড়িতেও গিয়েছি।
হার্ট অ্যাটাকের পর উত্তম একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ওই সময় 'গৃহদাহ' ছবির ডাবিং চলছিল। উত্তম অসুস্থতার মধ্যেও 'গৃহদাহ'র পরিচালক সুবোধ মিত্রকে শিডিউল দিয়েছিল। ছবিটা ছিল উত্তমের হোম প্রোডাকশন্সের। তাই ছবিটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিলিজ করার ব্যাপারে ওর খুব চিন্তা ছিল। রমাদি প্রায়ই ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে এসে উত্তমকে দেখে যেত। আর সাবধান করে যেত, 'আমি বলে যাচ্ছি, এই অসুস্থ শরীরে তুমি শুটিং-ডাবিং কিছুই করবে না। যদি জানতে পারি তুমি স্টুডিওতে গিয়েছ, তাহলে কিন্তু সাংঘাতিক কা- ঘটিয়ে বসব।' রমাদির জন্মদিনে প্রতি বছর উত্তম ও আমি নিয়ম করে তাকে ফুল পাঠাতাম। এমন একটা বছরও হয়নি, রমাদির জন্মদিনে আমি উইশ করিনি। শুধু অভিনেত্রী হিসেবে নয়, রমাদি মানুষ হিসেবেও যথেষ্ট খোলা মনের ছিলেন। তার মতো অভিনেত্রী ভারতীয় চলচ্চিত্রে বিরল। সত্যি কথা বলতে কী, অভিনয়ের একটা অন্যরকম সংজ্ঞা তিনি তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন। উত্তমের মতো তাকেও আমরা কোনো দিন ভুলব না।
হার্ট অ্যাটাকের পর উত্তম একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ওই সময় 'গৃহদাহ' ছবির ডাবিং চলছিল। উত্তম অসুস্থতার মধ্যেও 'গৃহদাহ'র পরিচালক সুবোধ মিত্রকে শিডিউল দিয়েছিল। ছবিটা ছিল উত্তমের হোম প্রোডাকশন্সের। তাই ছবিটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিলিজ করার ব্যাপারে ওর খুব চিন্তা ছিল। রমাদি প্রায়ই ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে এসে উত্তমকে দেখে যেত। আর সাবধান করে যেত, 'আমি বলে যাচ্ছি, এই অসুস্থ শরীরে তুমি শুটিং-ডাবিং কিছুই করবে না। যদি জানতে পারি তুমি স্টুডিওতে গিয়েছ, তাহলে কিন্তু সাংঘাতিক কা- ঘটিয়ে বসব।' রমাদির জন্মদিনে প্রতি বছর উত্তম ও আমি নিয়ম করে তাকে ফুল পাঠাতাম। এমন একটা বছরও হয়নি, রমাদির জন্মদিনে আমি উইশ করিনি। শুধু অভিনেত্রী হিসেবে নয়, রমাদি মানুষ হিসেবেও যথেষ্ট খোলা মনের ছিলেন। তার মতো অভিনেত্রী ভারতীয় চলচ্চিত্রে বিরল। সত্যি কথা বলতে কী, অভিনয়ের একটা অন্যরকম সংজ্ঞা তিনি তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন। উত্তমের মতো তাকেও আমরা কোনো দিন ভুলব না।
- সুপ্রিয়া দেবী
No comments:
Post a Comment